শিশুর মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি — new
একটি পরিবারকে ঘিরেই শিশুর বেড়ে উঠা নির্ভর করে।পরিবারকে তাই সামাজিক প্রতিষ্ঠানও বলা হয়।আর একজন শিশুর শিক্ষা অর্জনের জন্য অন্যতম ও প্রাথমিক ক্ষেত্র হলো তার পরিবার। তবে শিশু সুস্থ স্বাভাবিক বেড়ে উঠার পিছনে শুধুমাত্র একটি পরিবার নয় রয়েছে তার পরিবেশ,সমাজ ও তার রাষ্ট্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ করোনা মহামারীর স্বাভাবিক জীবনকে যেমন স্থবির করে তুলেছে তেমনি শিশুদের ওপর এর প্রভাব পড়ছে।
পিতা-মাতার চাইলেও তার সন্তানকে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে ঘরবন্দি এতে করে এই কোমলমতি শিশুদের মানসিক সমস্যার পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা।বিভিন্ন করানেই শিশুর এমন পরিবর্তন হতে পারে।যখন একটি শিশু মানসিক চাপে থাকে বা কোন হুমকি অনুভব করে তখন শরীরে প্রচুর পরিমাণে হরমোন এবং আ্যান্ডোনালির সৃষ্টি হয়।যার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ শরীর শক্তিশালী, দ্রুতগামী ও ক্ষমতাবান হয়ে উঠে।এর অন্যতম লক্ষ্যনীয় দিক হলো শিশুর আচরণগত সমস্যা।
★কীভাবে বুঝবেন আপনার শিশু আচরণগত ব্যাধিতে আক্রান্ত?
শিশুরা স্বভাবতই খেলতে পছন্দ করে।দুরন্তপনা,দুষ্টুমি করা বাচ্চাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একটা বাচ্চা যদি অকারণে রেগে যায়,চিৎকার-চেঁচামেচি করে,খারাপ আচরণ করে তখন ধরে নিতে হবে শিশুটি মানসিক সমস্যায় ভুগছে বা তার বিহেভিয়ারেল ডিসঅর্ডার ঘটেছে।
কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার কিশোররের একটি অন্যতম মানসিক রোগ।সাধারণ ১৫ বা তার কম বয়সী ছেলে মেয়েরা এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।প্রায় অনেক শিশুর পিতা মাতা এই সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারে না তবে মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ১ভাগই এই সমস্যায় আক্রান্ত।
★বিহেভিয়ারেল ডিসঅর্ডার বা কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার এর কারন–
আচরণগত ডিসঅর্ডার বা কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার নানা কারনে হতে পারে এর নির্দিষ্ট কারন এখনো অজানা।
▪️বংশগতি মানসিক রোগের বাহক হতে পারে। জেনেটিক্যালী মানসিক রোগের প্রবাহ কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়।
▪️একটি শিশু বেড়ে উঠার জন্য তার আশ-পাশের পরিবেশ অনেকাংশে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। অস্বাভাবিক পারিবারিক পরিবেশ, দাম্পত্য কলহ,পিতা-মাতা বা অন্য প্রতিবেশীর শারীরিক-মানসিক চাপ ও নির্যাতন ইত্যাদি যদি শিশু প্রত্যক্ষ করে শিশুর মানসিক এবং আচরণগত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
▪️শিশুরা যাই দেখে তাই copy করে বা observation learning হিসাবে নেয়। তাই পরিবার বা সমাজে অস্বাভাবিক পরিবেশ শিশুর আচরণগত সমস্যার অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা যায়।
▪️প্রযুক্তির এই যুগে শিশুদের অত্যধিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়া বা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পরা শিশুদের আচরণগত সমস্যা হতে পারে। প্রযুক্তির এডিশনে শিশুর মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে যা আচরণে প্রতিফলিত হয়।
▪️অনেক পিতা-মাতা ব্যস্ততার কারনে শিশুকে সময় দিতে পারে না।মেইড সার্ভেন্ডদের কাছেই বেড়ে উঠা আর একাকিত্ব শিশুর মানসিক সমস্যার অন্যতম কারন আর শিশুর মানসিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ বিহেভিয়ারেল ডিসঅর্ডার।
▪️শিশুর সহপাঠী বা খেলারসাথী কেমন, কাদের সাথে মিশছে,কোথায় যাচ্ছে তদারকি না করা।যার দ্বরূন অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়ার ফলস্বরূপ এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
▪️পারিবারিক দৈন্যদষা শিশুর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে শিশুর মানসিক অবস্থার প্রভাব বিস্তার করে সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা না নেওয়া বা শিশুকে সময় না দেওয়ার ফলে এই সমস্যা হতে পারে।
▪️শিশুর চিত্তবিনোদনের অভাবে এবং প্রতিদিনের একই খাদ্য তালিকা ও একই রুটিনে একঘেয়েমি চলে আসা। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং তা শিশুর আচরণগত ডিসঅর্ডার ঘটাতে পারে।
এছাড়াও শিশুর নানা কারনে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার ও বিহেভিয়ারেল ডিসঅর্ডার হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
★শিশুর আচরণগত সমস্যা থেকে উত্তোলনের উপায় বা করণীয় –
▪️শিশুর আচরণগত দিক ঠিক রাখতে শিশুর পরিবারকে ধৈর্যের সহিত মোকাবেলা করতে হবে এবং সময় প্রদর্শন করতে হবে।
▪️শিশুর মানসিক অবস্থা বুঝতে শিশুর সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে যাতে শিশুর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানা যায়।
▪️ শিশুকে কোনভাবেই বকাবকি বা মারধর করা যাবে না।মনে রাখতে হবে শিশু যাতে তার পিতা-মাতার উপর সন্তুষ্ট ও পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি জ্ঞাপন করে।
▪️শিশুর ভুল ত্রুটিগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে তার ভুলটি নেতিবাচক ভাবার যথার্থ কারন থাকে এবং তাকে বুঝাতে হবে।
▪️শিশুকে তার ভুল বুঝার সময় দিতে হবে।এবং ভালো কাজ করার উদ্বুদ্ধ করতে হবে ক্ষমার মত মহৎ কাজটি লালন করা শেখাতে হবে।
▪️শিশু যদি কোন অপরাধ করে ফেলে তাহলে তাকে বুঝাতে হবে কোনটা তার করা উচিত আর কোনটা উচিত নয়।
সর্বোপরী একটি শিশুর সুস্থস্বাভাবিক বিকাশের জন্য তার পরিবারের সাথে তার পরিবেশ তথা সমাজের পরিবেশ প্রভাব বিস্তার করে তাই শিশুর উত্তম শিক্ষা ও আচরণগত দিক ভালো রাখতে সকলকে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে- আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ ।
You must be logged in to post a comment.