যে সকল কারণে ইয়োগা করবেন
মানবদেহের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সঠিক খাদ্যাভাস ও পর্যাপ্ত ঘুমের পাশাপাশি প্রয়োজন শারীরিক পরিশ্রম। বর্তমান যুগে নানান রকম ব্যস্ততার কারণে দেখা যায় এই শারীরিক পরিশ্রম খুব একটা করা হয়ে ওঠে না। তাই অনেকেই বিভিন্ন রকম শারীরিক ব্যায়াম বেছে নিয়ে থাকেন। ব্যায়াম করার জন্য সময় করে পার্কে বা জিমে যাওয়ার পরিবর্তে ঘরে কিংবা যেকোনো জায়গায় ইয়োগা করা একটি সহজ ও কার্যকরী বিকল্প হতে পারে।
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম হচ্ছে মূলতঃ শারীরিক বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ। একসময় ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্যে এর প্রচলন শুরু হলেও আধুনিক বিশ্বে এটি শরীরচর্চার অংশ হিসেবেই সুপরিচিত। কথায় আছে, “সুস্থ দেহে সুন্দর মন।“ এ থেকে বোঝা যায় ইয়োগার প্রভাব মানবদেহের শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই আছে।
শারীরিক ফিটনেস নিশ্চিত
ইয়োগার মাধ্যমে পেশী মজবুত হয় যা শরীরকে ভেতর থেকে দৃঢ়তা প্রদান করে। ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরে যায়; তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। একইসাথে নমনীয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় শারীরিক সক্ষমতা অর্জিত হয়।
মানসিক চাপ থেকে মুক্তি
নিয়মিত ইয়োগা করলে মানসিক চাপ ও ক্লান্তি নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে মন ফুরফুরে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইয়োগা করার ফলে স্ট্রেস কমে। এমনকি ধারণা করা হয় যে ইয়োগা এংজাইটি বা ডিপ্রেশনের মত জটিল মানসিক সমস্যার ঝুঁকিও কমিয়ে আনতে পারে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ইয়োগার মাধ্যমে হৃদযন্ত্র ও,ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় তাই উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানীর মত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমে যার অর্থ হৃদঝুঁকি ও ডায়বেটি্স হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও গ্যাসের সমস্যা,আর্থ্রাইটিস,ব্রঙ্কাইটিস,এনিমিয়া,কোষ্ঠকাঠিন্য,এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধেও ইয়োগা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
শ্বাস-প্রশ্বাসের যথাযথ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মন শান্ত হয় যার কারণে মনোযোগ বাড়ে। মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ায় সিন্যাপ্সগুলো শক্তিশালী হয়। এভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
ব্যথা উপশম
শরীরের বিভিন্ন স্থানের (যেমন ঘাড়,পিঠ,কোমর,হাঁটু) ব্যথা উপশমে ইয়োগার বেশ ইতিবাচক প্রভাব রাখে। এমনকি মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতেও এটি থ্যারাপির মত কাজ করে। আর তাই চিকিৎসকেরা নানা সময় স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী নানান রকম ব্যথা নিরাময়ে রোগীদের ইয়োগার বিভিন্ন আসন প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন।
বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ
ইয়োগা করার ফলে শরীরের বিষ বা টক্সিন বের হয়ে যায় যার কারণে শরীর ও ত্বক তরতাজা থাকে। এ কারণে বাহ্যিকভাবে বয়সের ছাপ খুব একটা পড়ে না। তাছাড়া টেনশন ও স্ট্রেস কম হওয়ায় মানসিকভাবে সতেজ থাকা সহজ হয়।
আত্মিক উন্নতি সাধন
শারীরিক ও মানসিকভাবে যখন একজন ব্যক্তি সুস্থ ও প্রফুল্ল থাকেন, আত্মিকভাবেও তার বিকাশ ঘটে। ইয়োগার কারণে স্থিরতা বৃদ্ধি পায় যা ব্যক্তির অন্তর্জগত অনুসন্ধানের পথ সুগম করে।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবর্তন
ইয়োগার কারণে স্নায়ুগুলো সজাগ হয় ও শক্তিপ্রদানকারী হরমোন উৎপন্ন হয়। এতে করে নেতিবাচক অনুভূতি দূর হয় এবং মানুষ কর্মউদ্যমী হয়। সর্বোপরি মানবজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়।
ইয়োগার সবচেয়ে বড় সুবিধা এটি যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় করা যায়। (অবশ্য সব রকম আসন না!) নিজে নিজে ইয়োগা করতে চাইলে ইউটিউব টিউটোরিয়াল বা বিভিন্ন ছবি দেখে চেষ্টা করা যায়। তবে যেকোনরকম অস্বস্তি বা অস্বাভাবিকতা অনুভূত হলে খুব বেশি জোর দেয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
You must be logged in to post a comment.