বিশ্বের নামকরা কয়েকটি স্কলারশিপ
স্কলারশিপ নিয়ে বাইরের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্রাজুয়েট, মাস্টার্স এবং পিএইচডির সুযোগের আশায় প্রতিবছরই মেধাবী শিক্ষার্থীরা দিনগুনতে থাকে।উচ্চশিক্ষায় দেশের বাইরে শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে খরচ অনেক হয়ে থাকে। তাই মেধাবী শিক্ষার্থীরা অধিক আগ্রহে বিশ্বের নামকরা স্কলারশিপের অপেক্ষা করে থাকেন।
স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র বিনামূল্যে পড়ায় সুযোগই নয় তার সাথে নানান ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রায় ৪হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের এই বৃত্তিগুলো শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি,মেডিকেল ফি,ভিসা ফি এবং সাথে হাতখরচের অর্থও প্রদান করা হয়ে থাকে।
এসব স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার পর বিভিন্ন ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিতে হয় এবং যাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন তারাই এরূপ স্কলারশিপের সুযোগ পেয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্কলারশিপের জন্য বেশিরভাগই আইএলটিএস(ILTS) বা টোফেল(TOFEL) কোর্স করতে হয় এবং এরূপ কোর্স না করা থাকলে অনেকসময় সেটি অনেক বড় বাঁধা হয়েও দাঁড়ায়। তবে আপনি জেনে অবাক হবেন বিশ্বের নামকরা কয়েকটি স্কলারশিপ রয়েছে যেখানে এসবেরও প্রয়োজন হয় না বিশ্বের যে কেউ এইসব স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বসেরা কয়েকটি স্কলারশিপ সম্পর্কে –
(ক)যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ গেটস স্কলারশিপঃ
যুক্তরাজ্যে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যামব্রিজ গেটস বিশ্ববিদ্যালয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের জন্য ডিপ্লোমা, মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। এখানে স্কলারশিপ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এক বছরে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার পাউন্ড অর্থ পেয়ে থাকেন। এবং বিমানের আপ-ডাউনের খরচও বহন করা হয়।
মাইক্রোসফটের সহ প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও তার স্ত্রী মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশন এই বৃত্তি প্রদানে অর্থায়ন করে থাকে। এখানে স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা কোর্সভেদে প্রায় ৫০০-২০০০পাউন্ড অর্থ পাবেন। এবং যেসকল স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বিবাহিত তাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ সুবিধা পাশাপাশি যাদের সন্তান রয়েছে তাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ সুযোগ সুবিধা।
একাধিক সন্তান থাকলে ১ম সন্তানের জন্য পাবেন প্রায় ১০ হাজার ১২০ পাউন্ড ও ২য় সন্তানের জন্য পাবেন ৪ হাজার ৩২০ পাউন্ড অর্থ। এছাড়াও মাতৃত্বকালীন সুবিধাসহ পিতৃত্বকালীন সুবিধাও প্রদান করা হয়ে থাকে।এখানে ফিলওয়ার্কের জন্য পিএইচডির শিক্ষার্থী পেয়ে থাকেন আলাদা আ্যালাউন্স সুবিধা।
(খ)কানাডার সাস্কাচুয়ান বৃত্তিঃ
কানাডার সাস্কাচুয়ান বৃত্তির জন্য বিশ্বের যে কেউই আবেদন করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস ও ডক্টরাল ডিগ্রি প্রদানের জন্যই মূলত এই বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এই বৃত্তির পড়াশুনা হয়ে থাকে মূলত ইংরেজি মাধ্যমে।
বৃত্তিপ্রাপ্ত মাস্টার্সের জন্য দেওয়া হয় ১৬ হাজার ডলার এবং পিএইচডির জন্য দেওয়া হয়ে থাকে প্রায় ২০ হাজার ডলার।
(গ)আজারবাইজান সরকারি বৃত্তিঃ
বিনামূল্যে পড়াশুনার জন্য যেকোনো বিষয়ে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা আজারবাইজান সরকারের নিকট বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।বিনামূল্যে পড়ার সুবিধাসহ রয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তথা হাত খরচও প্রদান করা হয়। এমনকি এখানে আবেদনের জন্য আইএলটিএস করা লাগে না এবং সমান সুবিধার জন্য আইসিভুক্ত ও ন্যামভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীরাও আন্ডার গ্রাজুয়েট, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
(ঘ)কমনওয়েলথ বৃত্তিঃ
সাধারণত কমনওয়েলথ ভুক্ত ৫৪ দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স, পিএইচডির জন্য যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন।কমনওয়েলথ বৃত্তির অর্থ মূলত ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারনেশনাল ডেভেলপমেন্ট(ডিএফআইডি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রদান করে থাকে।মাস্টার্সের জন্য এক বছর ও পিএইচডির জন্য তিন বছরের কমনওয়েলথ বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে।এই বৃত্তির আবেদনের জন্যও কোনো ফি নেওয়া হয় না।
(ঙ)ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট উন্নয়ন ব্যাংক স্কলারশিপঃ
ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট উন্নয়ন ব্যাংকের স্কলারশিপ মূলত স্নাতক, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা প্রোগ্রাম অধ্যয়নের জন্য চালু রয়েছে। এখানে মুসলিম বিশ্বের প্রায় ৫৭টি দেশের নারী ও পুরুষ উভয় আবেদন করতে পারবেন।
এই বৃত্তির জন্য কোনো আবেদন ফি নেওয়া হয় না।বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য সর্বাধিক অর্থায়নে অন্যতম একটি বৃত্তির প্লাটফর্ম আইএসডিবি বৃত্তি।
(চ)কাতারে হাম্মাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপঃ
কাতারের দোহারে অবস্থিত হাম্মাদ বিন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেতে আইএলটিএস বা টোফেল কোর্সের প্রয়োজন হয় না। বিশ্বের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে কাতারের শিক্ষার্থীরাও স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন। এখানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডির জন্য যেসকল শিক্ষার্থীরা বৃত্তির জন্য মনোনীত হবেন যারা তারা যথাক্রমে আবাসন সুবিধাসহ বিমানের টিকেটের সুবিধাও পাবেন। এছাড়াও এসএস পড়ার জন্য পাবেন ৫ হাজার কাতারি রিয়েল এবং পিএইচডির জন্য পাবেন ৭ হাজার ৫০০ কাতারি রিয়েল।বিবাহিতদের জন্য রয়েছে পরিবার নিয়ে থাকার সুযোগ ও অন্যান্য সুবিধা।
প্রায় প্রতি বছরের শুরুতেই এরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা কিছু স্কলারশিপ বা শিক্ষা বৃত্তির জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। ভাগ্যবান স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বিশ্ব পরিমন্ডলে শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে নিজের জীবন সার্থক করে তুলুক এটাই কাম্য।
You must be logged in to post a comment.