মস্তিষ্কে ধারণকৃত তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার প্রক্রিয়া কিংবা মস্তিষ্কে ধারণকৃত তথ্যকে মনে রাখাকে স্মৃতিশক্তি বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে তথ্য আহরণ করে মস্তিষ্কে জমা করা হয় এবং দরকার অনুযায়ী সেই তথ্য আবার ভান্ডার থেকে খুঁজে নিয়ে আসা হয়। বিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস এর মতে, “স্মৃতিশক্তি হচ্ছে পেশির মতো।”
অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন যে মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে এবং মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের স্মৃতিশক্তি কিভাবে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রয়োজন মতো আমাদের মনে করিয়ে দেয়। বিভিন্ন গবেষণা হতে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা করতে পেরেছেন।
আমাদের মগজের বাইরের স্তরের নীচে আছে “হিপোক্যাম্পাস” নামের অংশ। এই অংশটিই নতুন কিছু শেখার জন্যে ও স্মৃতিশক্তির জন্যে কাজ করে। গবেষকদের মতে, হিপোক্যাম্পাসের আশেপাশের কয়েকটি অংশেই নতুন তথ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত হয়।
মস্তিষ্কের বাইরের দিকে থাকে কর্টেক্স। এটি আকারে বড় এবং এটি অসংখ্য কাজ করে থাকে। দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোর নড়াচড়া এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষ কিছু অনূভুতির জন্য মস্তিষ্কের কর্টেক্স বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া পরিচালনা করে।
স্মৃতি তৈরি করার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক এর কর্টেক্স ওই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত কোন চিহ্ন দিয়ে তা সংকেত হিসেবে নিউরনে পাঠায় এবং নিউরনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। দুটি নিউরনের সংযোগস্থলকে বলা হয় সিন্যাপ্স বা সাইন্যাপ্স।
পুরনো বন্ধু চেনা,পাখির ডাক শুনে পাখি চেনা সহ বিভিন্ন অনূভুতি পেতে কাজ করে কর্টেক্স। এ ধরনের অসংখ্য অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের ছোটোবেলা থেকেই জড়ো করে কর্টেক্স। পুরনো কিছু মনে করার সময় মস্তিষ্ক এই জমাকৃত অংশ থেকে তথ্য খুজে নেয়।
স্মৃতিশক্তির সাথে জন্মগত বা জেনেটিক বিষয় জড়িত আছে, তবে আশপাশের পরিবেশেরও অনেক অবদান আছে। খুব মনোযোগের সাথে যা শেখা হয়, স্মৃতিতে তার ছাপ দৃঢ় হয়। মস্তিষ্কের কর্টেক্সে তথ্য লিপিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়াটি হয় দীর্ঘস্থায়ী, যদি বিষয়টিকে মনোযোগের সাথে হৃদয়ঙ্গম করা হয়। ফলে সহজে অনেক কিছু দীর্ঘ দিন মনে রাখা সম্ভব হয়।
স্মৃতিশক্তির ভিতকে মজবুত ও দৃঢ় করতে চোখও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইন্টারনেট ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির এই যুগে অডিও-ভিডিও সহ বিভিন্ন প্রকারের নতুন শব্দের সাথে আমাদের পরিচিতি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কানে শোনা, চোখে দেখা ও শোনার মাধ্যমে যদি মিল ঘটিয়ে কিছু শেখা যায়, তা দীর্ঘ দিন মনে থেকে যায়। চোখের সাথে মস্তিষ্কের রয়েছে সরাসরি সংযোগ। চোখ দৃশ্যমান বস্তুর ছবি ধারণ করে, ইমেজ সৃষ্টি করে, ইমেজকে বিশ্লেষণ করে ব্রেনে। প্রকৃত অর্থে বিশ্লেষণের কারণেই আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই।
Related: Cyberbullying: Be Aware